আপওয়ার্কে কাজ শুরুর তিক্ত গল্প। যে লেগে থাকে সে কোন দিন ও হারেনা
আপওয়ার্ক টিউটোরিয়াল বাংলা – আপনি কি বাংলায় আপওয়ার্ক টিউটোরিয়াল খুজছেন? তাহলে এই লিখাটি আপনার জন্য।
আমার কাছে সফলতার সংজ্ঞা হল – জান্নাত।
তার মানে আমার মনে হয়, আমি যদি কোন দিন জেফ বেজসের মত ধনি হই, মার্ক জাকার এর মত বিশ্বমানের প্রোগ্রামার হই, গুগলের মত কোম্পানির ওনার হই, আমি কি নিজেকে সফল বলে দাবি করতে পারি বা পারবো? কখনই না, কারণ সফলতার সংজ্ঞা টা শুধুমাত্র কোরআনে আছে। আমি শুধুমাত্র সেদিন এ সফল হতে পারবো যেদিন জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবো – ইন শা আল্লাহ।
আমি আপওয়ার্কে (তখন “Odesk” ছিল) কাজ শুরু করেছি সেই ২০০৯ থেকে। তখন কিছু জানতাম না বুঝতাম না। ছিলনা এখনের মত অহরহ ইউটিউব ভিডিও বা মেন্টর। জাস্ট লোকমুখে শুনেই নিজে নিজে একাউন্ট খোলার ট্রাই করি, এরপরে কাজের জন্য বিড করি। এখন যত সহজে লিখে ফেলছি বিষয়টা তখন কিন্তু এতটা সহজ ছিলনা।
বিড কি তাও বুঝতাম না। ইংরেজি ও ততোটা ভালো পারতাম না ও বুঝতাম না। কিছু না বুঝলে সেটা ডিকশনারি খুলে জেনে নিতাম। আবার খাতাই ও লিখে রাখতাম।
একদিন অনেক ভোরে ফজরের নামায পরে ল্যাপটপ খুলে বসে পরি কাজে বিড করার জন্য। তখন আমি এটাও বুঝতাম না পেমেন্ট মেথড ভেরিফাইড ক্লায়েন্ট ও পেমেন্ট মেথড আনভেরিফায়েড ক্লায়েন্ট এর ব্যাপার টা।
ইমেইল মার্কেটিং বাংলা টিউটোরিয়াল >>
একটা কাজে ভুলে ভরা ইংরেজি লিখে বিডিং করি। ৫ মিনিটের মধ্যে দেখি বেটা (বায়ার/ক্লায়েন্ট) রিপ্লাই দিসে। আমি তো মহা খুশি। ওডেস্ক এ কাজ পাওয়া এত সহজ।
সে আমাকে এটা বলেছিল প্রতিদিন ৭-৮ ঘন্টা কাজ করতে হবে, প্রতি ঘণ্টায় সে আমাকে ৫ ডলার করে দিবে। সে এটা বলার সাথে সাথে আগে ক্যাকুলেটর নিয়ে বসে গেলাম, হিসাব করলাম ৫ x ৮ = ৪০ ডলার একদিনে আয় হবে। এবার হিসাব করলাম ৪০ x ৩০ = ১২০০ ডলার এক মাসে আয় হবে। পরের হিসাব ছিল আরও জটিল এই ১২০০ ডলার সমান বাংলাদেশের কত টাকা হয়। ১২০০ x ৭০ = ৮৪,০০০/- টাকা এক মাসে আয় তাও একজন ইন্টার পড়ুয়া ছেলের জন্য স্বপ্নের মত ছিল। যাই হোক, এটা ভেবে ভেবে তারাতারি ক্লায়েন্ট কে মেসেজ করলাম আমি রাজি।
আপওয়ার্ক সাকসেস টিউটোরিয়াল
বায়ার সাথে সাথে হায়ার করে নিল। আমি সাথে সাথে চেয়ার থেকে উঠে আম্মা কে পায়ে ধরে সালাম করে আসলাম। আম্মা তোমার পোলা বড়লোক্স হয়ে গেছে, আমি তো কাজ পেয়ে গেছি।
তারপরে দেখি সে আমাকে কাজের ডিটেলস পাঠাল। একটা সাইটের লিংক দিল লগিন করার আইডি আর পাসওয়ার্ড ও দিল। তারপরে সে আমাকে বলল, এই আইডি আর পাসওয়ার্ড দিয়ে এই ওয়েবসাইটে প্রতিদিন লগিন করবা, লগিন করার পরে এখানে একটা নাম্বার বা হিজিবিজি কিছু লিখা আসবে (এখন বুজি – ক্যাপচা ) সেটা নির্ভুল ভাবে ঐ লিখার নিচে একটা বক্স থাকবে সে বক্সে টাইপ করবা তারপরে সাবমিট বাটনে ক্লিক দিবা। এভাবে করে প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা কাজ করবা। প্রতি ১ সপ্তাহ পরে পরে পেমেন্ট পাবা।
আমি তো প্রতিদিন অনেক ভোরে ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরু করে দিতাম সারাদিন কাজ করতাম, আর ওই বেটাকে মেসেজ দিতাম, কিন্তু বেটার কোন খবর নাই, এভাবে ঘণ্টা যায়, দিন যায়, সপ্তাহ যায় কিন্তু আমার বায়ার এর ও কোন খবর নাই আর ডলার ও টাকার ও কোন খবর নাই। এত হিসাব আমি কেন করেছিলাম ?
এভাবে ১ মাস অনবরত কাজ করার পরে ওডেক্সে মেসেজ দিলাম, তারা বলে এই ক্লায়েন্ট এর কাজ আমি যদি আজীবন ও করি তাহলে ১ টাকা ও পাবনা। তার অন্যতম কারণ হল – সেই ক্লায়েন্ট এর পেমেন্ট মেথড আনভেরিফায়েড ছিল। ওডেক্স বা আপওয়ার্কে Hourly বা ঘন্টা ভিত্তিক কাজের গ্যারেন্টেড পেমেন্ট পাওয়ার পূর্বশর্ত হল – ক্লায়েন্ট এর পেমেন্ট মেথড অবশ্যই ভেরিফায়েড হতে হবে।
কিন্তু আমি সেদিন ও হাল ছেড়ে দেইনি। তাই আপনাদের কে বলি এত তারাতারি হতাশ না হয়ে লেগে থাকুন। লেগে থাকলে আপনি কোন দিন ঠকবেন না। হয়ত জিতবেন নয়ত শিখবেন কিন্তু কিছুই হারাবেন না। তাই হতাশ না হয়ে আজকে থেকেই কাজ এ লেগে থাকুন আর কাজে নেমে পড়ুন। আর তাই আজকে আমি $50/Hour এ কাজ করি আপওয়ার্কে, নিচের স্ক্রিনশট দেখুন। আলহামদুলিল্লাহ।