ইউটিউব থেকে সহজ আয়ের আদ্যপান্ত (ফ্রী সফটওয়্যার ডাউনলোড করুন)
ইউটিউব – সে এক অসীম পরিচিত অনলাইন ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইটের নাম। ছোট থেকে বৃদ্ধ, আর নারী থেকে পুরুষ সকলেই এই একটি সাইটের ভক্ত। ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীদের মধ্যে এমন কেউ নাই যে ইউটিউব এর নাম শুনেনাই বা এটি প্রতিদিন কমপক্ষে একবার ব্যবহার করেনা।
তাই আজকে আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু হল ইউটিউব ও ইউটিউব থেকে আয় কিভাবে করা যায়। কারণ, আমরা অনেকেই হয়ত ইউটিউবে শুধু মাত্র ভিডিও দেখেই দিন কাটিয়ে দিয়ে থাকি, কিন্তু এটা থেকে যে আয় করা যায় সেটা সম্পর্কে হয়ত আমরা অনেকেই জানিনা, জানলেও কখনো হয়ত বিষয়টা আমরা সিরিয়াসলি নেয়নায়। কিন্তু আপনি সামান্য পরিশ্রম করেই সারা জীবন আয় করার একটি সুন্দর ব্যাবস্থা করতে পারেন। তাই যদি আপনি ইউটিউব থেকে আয় করতে চান তাহলে এই আর্টিকেল টি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ে যদি সে ভাবে কাজ করেন তো আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি আগামি ৬ মাস পর থেকেই আপনি খুব ভালভাবে ইউটিউব থেকে আয় করতে পারেন, ইন শা আল্লাহ।
ইউটিউব পরিচিতিঃ
ইউটিউব আসলে কি? ইউটিউব হল একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট, যেখানে প্রতিদিন নিত্য নতুন ভিডিও আপলোড দেয়া হয়, আর আমরা সেই ভিডিও গুলো উপভোগ করার জন্য প্রতিদিন YouTube.com নামের এই সাইট টি ব্যবহার করে থাকি। এটি একটি আমেরিকান অনলাইন বা ইন্টারনেট ভিত্তিক ভিডিও শেয়ারিং সাইট। যেটির বর্তমান হেড কোয়ার্টার হল আমেরিকার কেলিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সেন ব্রুনো শহরে। এই ইউটিউব সাইট টি তৈরি করেছিলেন ৩ জন ব্যাক্তি মিলে ২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী তে, যাদের নাম হল – Chad Hurley (চ্যাড হারলে), Steve Chen (স্টীভ চ্যান) এবং Jawed Karim (জাভেদ কারিম)। জাভেদ কারিম একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভোদ ছেলে। এবং এটিকে ২০০৬ সালে ১.৬৫ বিলিয়ন ডলারে গুগল কিনে নেয়, তাদের কাছ থেকে। তাই ইউটিউব এর বর্তমান মালিক প্রতিষ্ঠান হল গুগল।
ইউটিউব এর সার্ভিস বা পণ্য সমূহঃ
১। YouTube.com
2. YouTube.com/Premium
3. Music.YouTube.com
4. TV.YouTube.com
5. YouTube.com/Kids
ইউটিউব এর আয় কত?
ইউটিউব এর বাৎসরিক আয় হল ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী। এবং এটির মূল আয় টি আসে হল গুগলের এডভার্টাইস্মেন্ট শেয়ারিং ওয়েব সাইট গুগল এডসেন্স থেকে। এবার আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, গুগল এডসেন্স এটা আবার কি জিনিস? গুগল এডসেন্স হল এমন একটা ওয়েবসাইট যেটির মাধ্যমে গুগল তাদের কাছে দেয়া মানুষের পণ্যের বা সার্ভিস সমূহের বিজ্ঞাপন গুলো কে আপনার বা আমাদের ওয়েবসাইট সমূহে ছড়িয়ে দেয়, বা আমাদের ইউটিউব ভিডিও গুলোতে ছড়িয়ে দেয়, এবং সে বিজ্ঞাপন সমূহ থেকে গুগল যা আয় করে তার একটা অংশ পাবলিশারের সাথে শেয়ার করে থাকে, অর্থাৎ আমার ভিডিও বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গুগল নিজে যত আয় করতে, গুগল তার একটা অংশ আমাকে শেয়ার করবে এই গুগল এডসেন্স অয়েবসাইটের মাধ্যমে। যেমন নিচে তার একটি নমুনা দেয়া হল।
এটি একটি গুগল এডসেন্স একাউন্ট এর স্ক্রীনশট
ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য কি কি লাগবে?
ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য আপনাকে তেমন বিশেষ কিছু জানতে হবেনা বা কাজ করতে হবেনা। খুব অল্প কয়েকটি বিষয় আপনার কাছে থাকলে আর ভালো ইচ্ছা শক্তি থাকলেই আপনি ইউটিউব থেকে আয় করা শুরু করতে পারবেন। ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য যে কয়েকটি জিনিস আপনার কাছে থাকাই লাগবে তা হল।
১। একটি কার্যকরি জিমেইল একাউন্ট
২। একটি ভালো মানের কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন যেটিতে ভালো ক্যামেরা রয়েছে।
৩। ভালো ইন্টারনেট সংযোগ
৪। কাজ করার মন মানসিকতা
৫। কি নিয়ে ভিডিও বানাবেন বা কিসের ভিডিও বানাবেন সেটার উপরে প্রস্তুতি
ইউটিউব থেকে কত টাকা আয় করা যায়?
ইউটিউব থেকে কত টাকা আয় করা যায় এমন কোন ধরা বাধা নিয়ম নেয়, আপনি যত বেশী কাজ করবেন, আপনার ভিডিও গুলো যত বেশী মানুষ দেখবে তত বেশী আপনার আয় হবে এতে কোন সন্দেহ নাই। তাই ইউটিউব থেকে আয় করার মূল ট্রিক টা হল, বেশী বেশী মানুষ কে আপনার ভিডিও টা দেখানু, যত বেশী মানুষ আপনার ভিডিও দেখবে, এবং যত দিন যত বছর যাবত দেখবে ততদিন ইউটিউব থেকে আপনার আয় হতে থাকবে। উদাহরন স্বরূপ বাংলাদেশী একটি ইউটিউব চ্যানেল এর মাসিক ও বাৎসরিক আয় কত তার একটা স্ক্রিনশট শেয়ার করলাম নিচে।
এই চ্যানেলটির নাম হল “ফারজানা ড্রইং একাডেমি” যেটির বর্তমান সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা হল প্রায় ৬০ লক্ষের ও বেশী। আর এই চ্যানেলটির সম্ভাব্য মাসিক আয় ধরা হয় প্রায় ৫ হাজার ডলার। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৪০ লক্ষ্য টাকার সমান। এই চ্যানেল টি মূলত একটি ড্রইং চ্যানেল, যেখানে সব গুলো ভিডিও ই প্রায় ড্রইং এর উপরে করা হয়েছে। চ্যানেল টি দেখতে আপনি এই লিংক এ ক্লিক করতে পারেন – Farjana Drawing Academy. তাহলে এবার আপনি এ বুঝে নেন ইউটিউবে কাজ করে ১ মাসে আপনি কত টাকা আয় করতে পারবেন।
ইউটিউব থেকে আয় করতে কতদিন সময় লাগতে পারে?
ইউটিউব একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট যেখানে মানুষ তাদের নিজেদের লাভের জন্য ভিডিও শেয়ার করে থাকে। ইউটিউবে ভিডিও শেয়ার করার মাধ্যমে অনেক ধরনের লাভ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল।
১। নিজের কোম্পানির প্রচার ও প্রসার
২। নিজের ব্যাবসার ব্রান্ডিং
৩। নিজের পণ্যের বিক্রি বাড়ানু।
৪। সারা বিশ্বব্যাপি নিজের ও কোম্পানির পরিচিতি
৫। ভিডিও তে স্পন্সরশীপ দেয়ার মাধ্যমে আয় করা
৬। গুগল এডসেন্স এর এড দেয়ার মাধ্যমে আয় করা
এটাই সব থেকে সহজ ও প্রধান উপায় ইউটিউব থেকে আয় করার। কারন এটার মাধ্যমে আপনি আপনার ভিডিও তে গুগল এডসেন্স এর এড শো করানুর মাধ্যমে প্রতি মাসে খুব টাকা আয় করতে পারবেন। তবে আয় কত হতে টা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার চ্যানেল এর ভিডিও গুলু কত বেশী মানুষ দেখছে তার উপরে, আর কোন দেশের মানুষ বেশী দেখছে তার উপরে।
ইউটিউব ভিডিও মনেটাইজ করার জন্য কি কি প্রয়োজন?
ইউটিউব থেকে আয় করার জন্য আপনার চ্যানেল টিকে মনেটাইজ করতে হবে, তার মানে আয় করার জন্য এটিকে ইউটিউব থেকে অনুমোদন নিতে হবে। আর ইউটিউব থেকে চ্যানেল টি অনুমোদন পাওয়ার জন্য আপনার চ্যানেল টি নিচের কয়েকটি শর্তের সাথে মিলতে হবে।
১। চ্যানেল এ কমপক্ষে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে ১২ মাসের মধ্যে
২। আপনার চ্যানেল এর ভিডিও গুলো কমপক্ষে ৪০০০ হাজার ঘণ্টা দেখতে হবে তাও ১২ মাসের মধ্যে
৩। চ্যানেল এর ভিডিও গুলো ১০০% নিজের ভিডিও হতে হবে। অন্যের ভিডিও দিয়ে মনেটাইজ করলে যে কোন সময় কপিরাইট ধরতে পারে।
৪। কোন বাজে ভিডিও বা সেক্স সম্পর্কিত ভিডিও কে মনেটাইজ করা হয়না।
এই কয়েকটি বিষয় মেনে নিয়ে কাজ করে যদি আপনার চ্যানেল টি উপরের প্রথম ২ টা ১ ও ২ নাম্বার এর সাথে যদি মিলে যায় তাহলে আপনি আপনার ওই চ্যানেল থেকে আয় শুরু করতে পারবেন।
ইউটিউব কিভাবে কখন ও কোথাই পেমেন্ট দেয়?
ইউটিউব থেকে আয় করা টাকা গুলু উইতড্র করার জন্য বা টাকা গুলু হাতে পাওয়ার জন্য আপনার একাউন্টে ১ মাসের মধ্যে কমপক্ষে ১০০ ডলার আয় হতে হবে, ১০০ ডলার আয় হয়ে গেলে সেই টাকা পরের মাসে আপনার এডসেন্স একাউন্টে চলে আসবে ইউটিউব থেকে, তারপরে এডসেন্স থেকে সেই টাকা আপনার ব্যাংক একাউন্টে আসবে ২৭ তারিখের মধ্যে।
কিভাবে একটি চ্যানেল খুলবেন?
ইউটিউব থেকে আয় শুরু করার পূর্ব শর্ত হল একটি ইউটিউব চ্যানেল থাকা ও সেটিতে মনেটাইজেশান এর অনুমোদন পাওয়া। তাহলে সবার আগে দেখে আসি কিভাবে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হয়।
১। www.YouTube.com এ জান
২। আপনার জিমেইল দিয়ে ইউটিউবে লগ ইন করে নিন।
৩। আপনার ইউটিউব এ লগিন হয়ে যাওয়ার পরে নিচের ছবিতে দেখানু অর্থাৎ উপরে ডানে নেম আয়কন এর উপরে ক্লিক দিলে নিচের ছবির মত করে দেখাবে। সেখান থেকে “Create a Channel” এই বাটন এ ক্লিক দিন।
৪। এবার আপনার সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কি ডিফল্ট যে চ্যানেল আছে সেটি ব্যবহার করবেন নাকি নতুন আরেক টি চ্যানেল তৈরি করতে চান, যদি নতুন আরেক টি তৈরি করতে চান, তাহলে “Use a Custom Name” সিলেক্ট করুন, আর যদি ডিফল্ট টি ব্যবহার করতে চান, তাহলে অবশ্যই “Use Your Name” এই অপশান টি সিলেক্ট করুন। নিচের ছবিতে দেখুন।
৫। যেহেতু আমি চ্যানেল এর নাম পরিবর্তন করবনা তাই আমি ১ নাম্বার অপশান টাই সিলেক্ট করলাম। তাই সিলেক্ট বাটন এ ক্লিক দিলাম। এবং পরের পেজ এ আপনি দেখতে পারবেন আপনার চ্যানেল টি তৈরি হয়ে গেছে। এর পরে আপনি আপলোড পিকচার এ ক্লিক দিয়ে আপনি আপনার চ্যানেল এর প্রোফাইল ইমেজ টি আপ্লোড করে নিতে পারবেন।
৬। এরপরে আপনি ডেস্ক্রিপশান বক্সে আপনার চ্যানেল এর ডেস্ক্রিপশান টি লিখুন। আপনার চ্যানেল টি কি সম্পর্কিত, আপনি এই চ্যানেল আপনি কিসের ভিডিও আপলোড করবেন, কেন তাদের আপনার চ্যানেল এ সাবস্ক্রাইব করবে বা আপনার ভিডিও গুলো দেখবে।
৭। এখানে ডেস্ক্রিপশান ও অন্যান্য ওয়েবসাইট বা সোশাল মিডিয়া লিংক সমূহ এড করার পরে আপনি নিচের দিকে স্ক্রল করে সেভ বাটন এ ক্লিক করলে আপনি আপনার চ্যানেল পেজ এ চলে যাবেন। নিচের পেজ টি দেখুন।
৮। এরপরে আপনি উপরের ছবিতে যেভাবে দেখা যাচ্ছে, ঠিক এই রকমের একটি পেজ দেখতে পারবেন সেভ করার পরে, তারপরে আপনাকে “Customize Channel” এই বাটন টিতে ক্লিক দিতে হবে। তাহলে পরের পেজ এ আমরা এমন টি দেখতে পারবো।
৯। আপনি উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন আমি “Settings” বাটন টি লাল করে মার্ক করে দিয়েছি, এই পেজ থেকে আপনাকে ওই সেটিংস বাটন টিতে ক্লিক দিতে হবে। এর পরে নিচের ছবিটি অনুসরণ করুন।
১০। উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন আমি সেটিংস থেকে চ্যানেল ট্যাব এ ক্লিক করেছি আর এখানে কান্ট্রি অফ রেসিডেন্স হিসাবে বাংলাদেশ টা সিলেক্ট করে দিয়েছি। তার পরে নিচের ছবিটি টি খেয়াল করুন।
১১। উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন বাম পাশের “Channel” অপশান থেকে আমি “Feature Eligibility” থেকে “Features That Require Phone Verification” এই অপশান টি ডিজেবল অবস্থাই আছে, এটিকে ইনেবল করতে হবে আমাদের ফোন ভেরিফাই করার মাধ্যমে। ফোন ভেরিফাই করার জন্য আপনাকে “Verify Phone Number” এই অপশান টিতে ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পরে আপনি নিচের পেজ টি দেখতে পারবেন।
১২। এখানে আপনার দেশ হিসবে বাংলাদেশ সিলেক্ট করুন আর “Text Me The Verification Code” এই অপশান টি সিলেক্ট করে আপনার ফোন নাম্বার টি “What is your phone number?” এই বক্সে দিন, তাহলে ইউটিউব থেকে আপনার আপনার নাম্বারে একটি ভেরিফিকেশন কোড আসবে সেটি প্রোভাইড করে নিচে সাবমিট বাটন টিতে ক্লিক করুন। বাস শেষ আপনার কাজ।
১৩। এই কাজ গুলু শেষ হওয়ার পরে “Monetization” নামের একটি অপশান দেখতে পারবেন হাতের বাম পাশে, সেটিতে ক্লিক করুন, সেটিতে ক্লিক করলে দেখতে পারবেন আপনার চ্যানেল টি মনেটাইজ হওয়ার জন্য আর কত ঘণ্টা বাকি আছে ও আর কত জন সাবস্ক্রাইবার বাকি আছে। নিচের ছবিটি খেয়াল করুন।
১৪। উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে আমাদের এই চ্যানেল এর সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ০, ও পাব্লিক ওয়াচ আওয়ারস ও ০। তাহলে আমাদের এই চ্যানেল টিকে মনেটাইজ করার জন্য অবশ্যই পরবর্তি ১২ মাসের মধ্যে আপনাকে ১০০০ সাবস্ক্রাইবারস ও ৪০০০ হাজার ঘণ্টা ওয়াচ টাইম পূরণ করতে হবে। আর এটা করার জন্য একমাত্র কাজ হল আপনার চ্যানেলে প্রতিদিন ভিডিও আপলোড করতে হবে আর সেই ভিডিও গুলু বেশী বেশী মানুষের সাথে শেয়ার করতে হবে – স্পেসিয়ালি সোসাল মিডিয়া তে।
১৫। এবার প্রশ্ন হল ইউটিউবে ভিডিও কিভাবে আপলোড করবেন। ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করা অনেক সহজ কাজ। চলুন দেখে নেয়া যাক কিভাবে ভিডিও আপলোড করতে হয় ইউটিউবে।